Friday, March 17, 2023

রাস্তা

সন্ত্রাসীর তিনটে বাচ্চা। সন্ত্রাসী মরে গেছে। বাচ্চা গেছে বাঁচাতে। বাচ্চার শিক্ষিত বন্ধু হয়েছে। তারা সন্ত্রাসীদের বাঁচিয়ে দিয়েছে।

Monday, November 30, 2009

ব্যোমকেশ

                                
                                   ১


দিব্বি একসাথে ঘরে বসে চুপচাপ মাল খাচ্ছি, হঠাত্ অজয়-দা, হাতের গ্লাস্-টা নাবিয়ে রেখে, উঠে দাঁড়িয়ে, খান্-কতক আড়মোড়া ভেঙে বলল, "চল তোকে ব্যোমকেশ দেখিয়ে আনি।" আমি বললাম "ব্যোমকেশ-টা কে? ব্যোমকেশ বক্সী?" "ব্যোমকেশ বক্সী নয়!" অজয়-দা বলল, "শুধু ব্যোমকেশ! আমার রিসার্চের মেইন ইন্সপিরেশন। আমার থিঙ্কিঙ-পার্টনার। আমরা য্খন গভীর চিন্তা করি তখন কাউন্টার্-এ ফ্লেক খাই।"



সিঁড়ি দিয়ে নেবে মেসের সামনে-টায় এসে অজয়্-দা জিগ্গেস করল, "তুই ভূতে ভয় পাস্?" আমি বললাম্, "না!" অজয়-দা বলল, "আর যদি সে ভূত কোন গাছের সাথে বাঁধা থাকে?" আমি বললাম, "ভূত-কে মোটেই বেঁধে রাখা যায় না!" অজয়-দা আমার দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে বলল, "এই বুদ্ধি নিয়ে তুই রিসার্চ করবি! ভূত-কে যে বেঁধেছে সে যদি নিজেও ভূত হয়, তাহলে নিশ্চোই যায়।"

                                   ২


ফ্যাকাল্টি ক্লাবের পাশ দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে যে রাস্তা-টা চলে গেছে সেটার কাছে এসে অজয়-দা একটা সিগারেট ধরাল। তারপর হাওয়ায় একটা রিঙ ছেড়ে বলল, "তোর যদি ভূতে ভয় থাকে তাহলে কেটে পর। এখন আমি ব্যোমকেশের সাথে সিগারেট খাব।"


                                   ৩


ইন্স্টিটিউটের এইদিকটা একটু শুনশান, চুপচাপ। রাস্তার একদিকে সাড়ি বেঁধে গাছ। সোজা রাস্তা যে কত দূরে চলে গেছে তা বোঝা মুসকিল। দিনের আলো পরে আসছে। আমার কিরকম অদ্ভূত অদ্ভূত লাগছিল। বললাম, "তোমার বন্ধু কই?"

কিছুটা হাঁটার পর আমরা একটা বিরাট বড় গাছের তলায় এসে থামলাম। অজয়-দা বলল, "এই গাছ-টা IISc-র সবচেয়ে পুরোন গাছ। যখন IISc হয়নি, তখন-ও গাছ-টা ঠিক এত বড়-ই ছিল!" আমি অবাক হয়ে বললাম, "গাছ-টার বয়স একশ বছর?" "আড়াইশ বছর।" অজয়-দা বলল। আমি বললাম, "আমার কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে না!" অজয়-দা বিরক্ত হয়ে বলল, "তুই তো কিছুই দেখতে পাস না! নয়ত এটাও দেখতে পেতি যে গাছ-টার গায়ে এখন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ব্যোমকেশ সিগারেট খাচ্ছে!"


                                   ৪


আমি চারপাশে কাওকে দেখতে পেলাম না। কিন্তু তারপর হঠাত্ দেখলামঃ অজয়-দার হাতের সিগারেট-টা নিজে-নিজেই পুড়ছে। শুধু হাওয়ায় পুড়ছে তা নয়, হূ-হূ করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেন কোল্ড্-ড্রিঙ্ক্সের বোতলে কেউ স্ট্র লাগিয়ে চোঁ-চোঁ টান দিচ্ছে!


আমি চমকে উঠলাম
অজয়-দা বলল, "ব্যোমকেশ সিগারেট খাচ্ছে।" আমি বললাম, "ব্যোমকেশ-টা কে?" অজয়-দা বলল, "ব্যোমকেশ একজন সিগারেট প্রেমিক। ও সিগারেট খেতে এত ভালবাসে যে মরবার পরেও অভ্যাস ছাড়তে পারে নি। য্খন বেঁচে ছিল তখন হূঁকো খেত। এখন আমার থেকে কাউন্টারে ফ্লেক খায়।"


                                   ৫


অজয়-দা আরেকটা সিগারেট ধরাল। বলল, "ব্যোমকেশ মাইসোরের মহারাজার ব্যাটালিয়ান-এ সৈনিক ছিল। আঠারোশ সালে ঈস্ট্-ইন্ডিয়া কম্পানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যায়। ব্যোমকেশের বয়স তখন এই এখন আমাদের মতন-ই হবে।


বেঁচে থাকতে স্মোক করতে খুব ভালবাসত। তাই মারা যাবার পর রাজবাড়িতে য্খন-ই কেউ অম্বুরি তামাক খেত, ব্যোমকেশ ওমনি গিযে সেখান থেকে ভুড়ুক্-ভুড়ুক টান মারত।


কিন্তু ইন্সিডেন্টালি ওই যুদ্ধে ব্যোমকেশের বাবা-ও মারা যান। তিনি বরাবর ছেলেকে ধূমপান করতে নিশেধ করে এসেছেন। তাই একদিন ব্যোমকেশকে অন্যের হূকো থেকে টান মারতে দেখে, ওকে এত দূরে নিয়ে এসে, এই গাছ্-টার সাথে বেঁধে রাখেন। বেচারা একশ বছর ধরে ধূমপান করতে পারে নি!


তারপর এখানে IISc হোল। লোকজন বাড়ল। সেই থেকে য্খন-ই এখানে দাঁড়িয়ে কেউ সিগারেট খায় ব্যোমকেশ তার থেকে নিয়ে অল্প অল্প একটু টান দেয়। গাছের সাথে বাঁধা বলে বেশিদূর যেতে পারে না। কী ট্র্যাজিক লাইফ বল দেখি!"


                                   ৬


দেখলাম দ্বিতীয় সিগারেট্-টা ততক্ষণে প্রায় শেষ হয়ে এসছে। সূরয ডুবছিল। আমি বললাম, "চল ফিরে যাই।"


অজয়-দা একটু চুপ করে থেকে বলল, "আমরা অনেক কিছু নিয়ে গল্প করি। ও আমাকে অনেক আইডিয়া-ও দেয়। আমার পরের পেপারে আমি ব্যোমকেশকে একনলেজ করব।"


আমরা ঘরের দিকে এগোলাম। যেতে যেতে অজয়-দা বলল, "ব্যোমকেশকে যদি সবাই একটু একটু করে সিগারেটের ভাগ দিত কী ভাল হোত বল দেখি! এখন বেচারা শুধু আমার থেকেই খায়। গাছটার গায়ে একটা বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া উচিত:
                'দয়া করিয়া এইখানে দাঁড়াইয়া ধূমপান করুন!'"


তারপর কিছুক্ষণ গভীর চিন্তা করে বলল, "আচ্ছা, ব্যাপারটা সবাই কে জানিয়ে দিলে কেমন হয়? আগডুম্-বাগডুমে এই নিয়ে তুই একটা বিজ্ঞাপন দিতে পারবি?"



                                   ৭


ঘরে ঢুকে দেখলাম আমাদের মালের বোতলগুলো সব খালি! আমি বললাম, "এবার বল এটাও তোমার ব্যোমকেশ এসে খেয়ে গেছে!" অজয়-দা বলল, "তোর দ্বারা আর রিসার্চ হোল নাঃ। জানিস না এলকোহলের ভেপার প্রেশর বেশি। ওটা ইভাপোরেট করে গেছে। ব্যোমকেশ এখানে আসবে কি করে! ও তো গাছের সাথে বাঁধা!"

Sunday, October 25, 2009

রাত্-ঘুম




কাজলে বৃষ্টি-ভেজা রামধনূ।
জলের গভীরে মনের বুদবুদ।
মধ্যরাতে দুই পঙত্তি নৈঃশব্দ।
--
আধ্-ঘুমের শিশির।
নির্বাক অবয়ব।
--
হাসনুহানার নীল্-গোলাপী।
বসন্ত।